এলএসডি যার পূর্ণ রূপ লাইসারজিক অ্যাসিড ডায়েথ্যালামাইড। এটি এক প্রকারের মাদকদ্রব্য যা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর পর শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ড্রাগ অ্যাবিউজ এর তথ্য অনুযায়ী লাইসারজিক অ্যাসিড ডায়েথ্যালামাইড বা এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে এটি তৈরি একটি পদার্থ।
এটি সরিষা এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের শরীরের লাইসারজিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়। এটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন এর মতে এটি পাউডার , তরল , ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়। এলএসডিকে সাইকাডেলিক মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।এই ধরনের মাদকের প্রভাবে সাধারণত মানুষ নিজের আশেপাশে বাস্তবতাকে ভিন্নভাবে অনুভব করে এবং কখনও কখনও হ্যালুসিনেট বা অলিক বস্তু প্রত্যক্ষ করে থাকে। ১৯৩৮ সালে প্রথমবার এলএসডি সংশ্লেষণ করা হয় এরপর ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে গবেষকরা নানা ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসায় এলএসডি ব্যবহারের জন্য প্রচারণা চালায়। সেই সময় এই বিষয়ে বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হয়, আয়োজিত হয় একাধিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডি সহ সবধরনের সাইকাডেলিক নিষিদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এই বিষয়ে গবেষণায় ঢাকা পড়ে তবে বিশ্বের নানা দেশে বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা মানসিক অবসাদের মত অসুস্থতায় চিকিৎসায় এলএসডি কার্যকারিতা নিয়ে এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোচিকিৎসক ও রসায়নবিদ্যা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে নির্দিষ্ট মাত্রায় এলএসডি গ্রহণের ফলে অসুস্থতার কারণে দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা রোগীদের দুশ্চিন্তা কমে। লন্ডন, বাসেল এবং অরিক শহরে ৯৫ জন রোগীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করেন সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিসিন বিভাগের গবেষক ম্যাথিয়াস লেগটি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসার প্রয়োজনে বা গবেষণার কাজে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে নির্দিষ্ট মাত্রায় মানুষ এলএসডি গ্রহণ করে থাকে। তবে এটি মূলত মাদক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ভাসন অনুযায়ি এটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরেটোনিন নামক রাসায়নিক এর কার্যক্রম প্রভাবিত করে ব্যবহার, অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতার সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে। এলএসডি নেয়ার পর সাধারণত মানুষ হ্যালুসিনেট করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই অনেক সময় অলিক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে মানুষ। এলএসডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা নথিপত্র রয়েছে।
ইউরোপের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট রিসার্চ গেইট এর তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় এমন ৬৪ জন নিহত হয় এলএসডি গ্রহণের পরবর্তী জটিলতায়। বিষন্নতা বা দুশ্চিন্তায় ভোগা ব্যাক্তিরা এলএসডি গ্রহণের পর আরও বেশি বিষণ্নতা বা দুশ্চিন্তা আক্রান্ত হতে পারেন বলে উঠে এসেছে অনেক গবেষণায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বলে এলএসডি গ্রহণের পর অনেকে মনে করেন যে তিনি সবকিছু পরিষ্কার দেখছেন এবং তার শরিরে অতিমানবিক শক্তি এসেছে। এমন বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার ফলে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
এলএসডি মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকম প্রভাব ফেলতে থাকে। এছাড়া এলএসডি নেওয়ার ফলে মানুষের হৃদস্পন্দন রক্তচাপ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এ ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রা ক্ষুধামন্দা অতিরিক্ত ঘামসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন।