এক বিশাল গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে

অজানা তথ্য

এমনটা আমরা সবাই জানি যে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর পূর্বে একটি ভয়ঙ্কর গ্রহাণুর আঘাতে এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ডাইনোসর প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আর আমরা এটাও জানি আমাদের পৃথিবীর চারপাশে এমন অনেক ছোট ছোট গ্রহাণু আছে যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে এক সময় আমাদের পৃথিবীর অনেক কাছে চলে আসে। কিছু গ্রহাণু এতটাই ছোট হয়ে থাকে যে, সেগুলো আমাদের পৃথিবীর জন্য তেমন কোনো বিপদের নয়। কিন্তু এমন কিছু বড় গ্রহাণু আছে, যা আমাদের পৃথিবী থেকে প্রাণের বিনাশ করে দিতে পারে।

 

এমন একটি বড় গ্রহাণু রয়েছে, যা আমাদের এই পৃথিবীকে আঘাত করার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। সেই গ্রহাণুর নাম হচ্ছে “বেনু”। নাসা এই গ্রহাণুর জন্য এর পূর্বেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এইবার নাসা এবং চীনের বিজ্ঞানীরা এমন সব প্রযুক্তির উপরে কাজ করছেন, যেন তারা এই গ্রহাণুটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারেন বা গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে।

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা বড় আকারের এই গ্রহাণুর দিকে চীন ও নাসা ঝাকে ঝাকে রকেট এবং মহাকাশযান পাঠাচ্ছে। এই গ্রহাণুটির ওজন সাড়ে ৮ কোটি টনেরও বেশি এবং গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৬৩ হাজার কিলোমিটার। আমেরিকার অ্যাম্পেয়ার স্টেট বিল্ডিং এর উচ্চতা যতটা, গ্রহাণু তার থেকেও চওড়া যা প্রায় ১.৫ হাজার ফুট। বিজ্ঞনীরা এমনটা আশঙ্কা করছেন যে, হিরোশিমাতে আঘাত হানা পরমাণু বোমার মত ৮০ হাজার বোমা একসাথে পড়লে যতটা শক্তির জন্ম হতো, এই গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আঘাত আনলে ঠিক ততটাই শক্তির উৎপন্ন হবে। আর এতটা শক্তি আমাদের এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ জীব কূলকে ধংশ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আমেরিকার স্পেস এজেন্সি নাসা এই গ্রহাণু নিয়ে অনেকদিন থেকেই গবেষণা করে যাচ্ছে। চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চায়না ন্যাশনাল স্পেস সাইন্স সেন্টারের বিজ্ঞানীরা এই ধেয়ে আসা গ্রহাণুকে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে দিতে, এর অভিমূখে পৃথিবী থেকে খুবই শক্তিশালী প্রায় ২.৫ ডজন রকেট পাঠিয়ে মহাকাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে চাইছেন। চীনা বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা, তাদের বানানো সব থেকে ২৩টি এডভান্স “লংমার্চ ফাইভ” রকেট পাঠানো হবে যার প্রতিটি রকেটের ওজন ৯০০ মেট্রিক টন।

প্রায় একই ধরণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নাসা। তারা চাইছে ৩০ ফুট উচ্চতার একঝাঁক মহাকাশযান পাঠিয়ে গ্রহাণুটির উপরে হাতুড়ীর মত আঘাত করতে হবে। আর এই জন্যই এই মিশনটির নাম দিয়েছে “হেমার”। এই গ্রহাণু আর মাত্র ৫৪ থেকে ৭৮ বছরের মধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথের মাত্র ৭৫ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে এসে যাওয়ার কথা এবং এই গ্রহাণুর গতিপথের যদি  পরিবর্তন না হয়, তাহলে এটি ২১৭৫ থেকে ২১৯৬ সালের মধ্যে আমাদের পৃথিবীতে এসে আঘাত করবে। কি ধরণের পদার্থ দিয়ে তৈরি এই গ্রহাণুটি তা বোঝার জন্য নাসা এই গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ করছে। এই গ্রহাণু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য নাসা অসিরিস রেক্স নামের মিশন চালনা করছে। পৃথিবীর সাথে গ্রহাণুটির সংঘর্ষ হলে যে প্রতিক্রিয়াটি তৈরি হবে, সেটা প্রায় ১২০০ মেগা টনের কাছাকাছি।

মন্তব্য করুন