বকশিস কত প্রকার এবং কী কী

গল্পের আসর

বকশিস শব্দটা শুনতে পজিটিভ মনে হলেও এটা কিন্তু সব সময় পজিটিভ থাকে না। পজিটিভ না থাকারও বেশ কিছু কারণ আছে। বেশ কয়েকদিন ধরে ভাবতেছি বকশিসের শ্রেনীবিভাগ নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখবো কিন্তু নানা কাজের মাঝে সময় করে লেখা হয় না। এখন রাত ১২ টা বাজে কিন্তু ঘুম আসছে না। তাই চিন্তা করলাম এখনি লেখা শুরু করি। তাহলে চলুন আজ কিছু বকশিসের শ্রেনীবিভাগ নিয়ে আলোচনা করি।

 

১। ভেরিফিকেশন বকশিসঃ ঢাকাতে আমার বউয়ের পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলাম। তো পাসপোর্ট করার সময় পাসপোর্টের আবেদনকারী ব্যক্তির নামে কোন মামলা মোকাদ্দমা আছে কিনা সেটা যাচাই করার জন্য পাসপোর্ট অফিস পুলিশ দিয়ে ভেরিফিকেশন করে। এই ভেরিফিকেশনের জন্য যে খরচ হবে সেটা আগেই পাসপোর্ট অফিস আবেদন ফি এর সাথে নিয়ে থাকে। আবেদন করার ২৫ দিন পর ঢাকাতে আমার ফোনে একটা কল আসলো।

পুলিশঃ আপনি কি অমুকের হাসব্যান্ড বলছেন?
আমিঃ জি বলছি, বলুন।

পুলিশঃ আমি এস আই অমুক বলছি, আপনার স্ত্রীর ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। আপনি আপনার এবং আপনার স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়ে অমুক জায়গায় আসেন। আমি এখন মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছি, আপনি এখানে এসে আমাকে ফোন দিবেন। (তখন মাগরিবের সময়)
আমিঃ আমি তো এখন বাইরে আছি, আমার বাসায় আসতে ১ ঘন্টা সময় লাগবে। আপনি আগে থেকে জানালে আমি বাসায় থাকতাম।


পুলিশঃ আচ্ছা, তাহলে আপনি বাসায় এসে আমাকে ফোন দিবেন, ঐ সময় আমি যেখানে থাকবো, সেখানে আমার সাথে দেখা করবেন।
আমিঃ ওকে, ১ ঘন্টা পর আমি বাসায় এসে ফোন দিলাম।
পুলিশঃ এখন তো এশার নামাজের সময় হয়ে গেছে, আমি মসজিদে নামাজ পড়তে ঢুকবো, আমি ১৫ মিনিট পর এসে অমুক মসজিদের সামনে দাড়ান।
আমিঃ আমি সময় মত গিয়ে মসজিদের সামনে দাড়ালাম আর মনে মনে ভাবতেছি, সব পুলিশ খারাপ না। এই পুলিশটা নামাজের প্রতি কত সতর্ক, নিশ্চয় অনেক ধার্মিক। সে নিশ্চয় কোন টাকা পয়সা চাইবে না।

তারপর নামাজ শেষ করে ফোনে কথা বলে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়ে জায়গামত একজন আসলেন। আমি তার পোশাক দেখে এবং ফোনে কথা বলে খুবই খুশি। তারপর ফটোকপিগুলো নিল এবং কথাবার্তা শেষ করে আমি তারাতারি কেটে পরার জন্য পা বাড়ালাম, অমনি বলে উঠলো
পুলিশঃ ভাই, আমি কিছু চাচ্ছি না, অফিসে বেশ কিছু খরচপাতি আছে, তার জন্য কিছু বকশিস দেন।


আমি তো পুরোই হতবাক, এতক্ষণ কোন ধার্মিক নামাজীর সাথে কথা বললাম? শেষমেশ পকেট থেকে একটা বকশিস নোট বের করে হাতে দিলাম, সে নোটটা পকেটে ভরে হাসতে হাসতে চলে গেল, আর আমি কিছুক্ষণ দাড়ায় তার যাওয়া দেখলাম আর মনে অনেক কিছু ভাবলাম………………………।

 

২। প্রি অপারেশন বকশিসঃ কিছুদিন আগে আমার একজন রিলেটিভ এক্সিডেন্ট করে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এক্সিডেন্টে তার পা দুইটা মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে গেছে এবং খুব ব্লিডিং হচ্ছিল। খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে গেলাম এবং তার অপারেশনের জন্য তিন ব্যাগ রক্ত জোগাড় করলাম। তারপর তার বাসার লোকজন আসলো। তাকে ইমারজেন্সি থেকে অপারেশন থিয়েটারের ওয়েটিং রুমে নিয়ে যাওয়া হল। তার অবস্থা খুবই খারাপ, সে পায়ের যন্ত্রনাতে কাতরাচ্ছিল। এমন সময় ইমার্জেন্সিতে থাকা যে দুইজন সেবক তাকে সেবা দিয়েছে তারা এসে বলল, “ আমাদের কাজ শেষ, এখন অপারেশনের পরে অন্যরা তাকে হেল্প করবে। আমরা অনেক হেল্প করেছি, আমাদের বকশিস দেন, ডিউটি শেষ বাসায় যাবো। তো রুগীর বাসা থেকে যারা এসেছিল, তারা বেশ কিছু টাকা দিতে গেল কিন্তু তারা নিবে না, বলল “ আমরা যেভাবে হেল্প করেছি তার জন্য এত কম বকশিস কেউ দেয়?” তারপর আরো বেশ কিছু টাকা দেওয়ার পর তারা যন্ত্রনায় সটফট করা একজন ব্যক্তি সেবা করার বকশিস নিয়ে বাসায় গেল।

এটাও আমি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলাম কিন্তু তারপর যেটা ঘটলো, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। অপারেশন থিয়েটার থেকে সবুজ রঙের অ্যাপ্রন পরা একজন এসে বলল “৮ নম্বর রোগীর লোক কে? দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে আসেন, এখনি অপারেশন শুরু হবে। তারপর লাগলে আরেক ব্যাগ নিয়ে আসবেন।” কারণ তখন ৭ নম্বর সিরিয়ালের রোগীর অপারেশন শেষের দিকে আর আমাদের রোগীর সিরিয়াল ৮ নম্বর।  আমি গিয়ে ব্লাড ব্যাংকে সংরক্ষিত ৩ ব্যাগের মধ্যে দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে আসলাম। এসে অপারেশন থিয়েটারের সামনে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। এর মধ্যে জনৈক ব্যক্তি একজন রোগী নিয়ে আসলো। সেই রোগী স্ট্রেচারের উপর বসে আছে। তার পায়ের কোন একটা আঙ্গুল হয়ত ভেঙ্গে গেছে। সেই জনৈক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশের এস আই পরিচয় দিয়ে বলল, “আমার রোগীর আগে অপারেশন করা লাগবে।” আর সেই সবুজ অ্যাপ্রন পরিহিত লোকটি আমাদের রোগীর সিরিয়াল ব্রেক করে ঐ রোগীকে অপারেশনের জন্য ভিতরে নিয়ে গেল।

আমি প্রায় ২০-২৫ মিনিট ওই দুই ব্যাগ রক্ত হাতে করে দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর সেই লোক আবার বাইরে আসলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ আপনি আমাদের রোগীর সিরিয়াল ব্রেক করে অন্য রোগীর অপারেশন শুরু করালেন কেন?” তখন সে আমাকে বলল, “কিছু টাকা দেন তাহলে আপনার রোগীকে এবার অপারেশনে ঢুকিয়ে দিবো নইলে আরো দেরি হবে।” তখন বুঝলাম প্রি অপারেশন বকশিস ছাড়া সময়মত অপারেশন করানো যাবে না। তাই অবশেষে তাকে প্রি অপারেশন বকশিস দিয়ে আমাদের রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকাতে পারলাম। 

 

অবশেষে বকশিসের মাত্র দুইটি প্রকারভেদ লিখলাম। আজ আর নয়। এখনো যে কত রকম বকশিস রয়েছে যা আমার অজানা। আপনারা যদি এমন কোন বকশিসের নাম জেনে থাকেন, তবে কমেন্টে জানাতে পারেন।

মন্তব্য করুন