ইন্ডিয়ার টুরিস্ট ভিসা পেতে কি কি লাগে?

Uncategorized তথ্য ও প্রযুক্তি

আপনি যদি ভ্রমণ প্রিয়সী হোন, তবে কম খরচে দেশের বাইরে ইন্ডিয়ায় একমাত্র জায়গা, যেখানে আপনি খুব সহজে ঘুড়তে যেতে পারবেন। তবে ইন্ডিয়াতে যেতে হলে আপনার লাগবে একটি টুরিস্ট ভিসা।

আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে খুব সহজে আপনি একটি টুরিস্ট ভিসা পেয়ে যাবেন।

 

টুরিস্ট ভিসা করতে যা যা লাগবেঃ

১। কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ রয়েছে এমন আপনার মূল পাসপোর্ট এবং পুরনো সবগুলো পাসপোর্ট (যদি থাকে) এবং মূল পাসপোর্টের ২ ও ৩ পাতার একসাথে একটি ফটোকপি। এখানে আরেকটি কথা বলে রাখি যদি আপনার পুরনো কোন পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়ে থাকে, তবে সেই পাসপোর্ট হারানোর একটি জিডি কপি সাথে দিতে হবে।

২।

ক) আপনার লাস্ট ৬ মাসের ব্যাংক স্টেট্মেন্ট। (আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিনিমাম ২০ হাজার টাকা থাকতে হবে।

অথবা

খ) আপনি যদি ব্যাংক স্টেট্মেন্ট দিতে না চান, তবে আপনার কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থাকলে সেই কার্ডে ৫০০ বা ১০০০ ডলার এন্ডোর্স করে নিবেন(সর্বোচ্চ ১২০০০ ডলার পর্যন্ত এন্ডোর্স করা যায়)। এখন আপনার ঐ ক্রেডিট কার্ডের একটি ফটোকপি এবং পাসপোর্টের যে পাতায় এন্ডোর্স করে দিয়েছে ঐ পাতার একটি ফটোকপি লাগবে।

অথবা

গ) হয়ত ভাবছেন আপনার তো কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড নেই, বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই তাহলে কি করবেন? নো টেনশন, আপনি কোন ব্যাংক থেকে কমপক্ষে ২০০ ডলার এন্ডোর্স করে একটা এন্ডোর্স সার্টিফিকেট নিবেন এবং ঐ সার্টিফিকেটটি আবেদনের সাথে জমা দিবেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক আপনার থেকে ২৫০-৩০০ টাকা চার্জ নিতে পারে।

 

৩। আপনার NID বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি।
৪। বাড়ির বিদ্যুৎ/পানি/টেলিফোন বা গ্যাস বিলের একটা ফটোকপি।

৫। টু বাই টু বা দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি ফটো দুইটা (যদিও লাগে একটা)। এখানে বেশ কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। ছবি ৩ মাসের বেশি পুরনো হওয়া যাবে না। ছবি তোলার সময় চোখে চশমা দেওয়া যাবে না। দুই কান দেখা যাবে। মাথায় টুপি থাকা যাবে না এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে।

মোটামটি ভিসা ডকুমেন্ট গোছানো শেষ, তবে আপনি যদি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী হোন তবে আরো বেশ কিছু ডকুমেন্ট লাগবে,
চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রেঃ NOC/GO এবং ভিজিটিং কার্ড
ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেঃ আপডেটেড ট্রেড লাইসেন্স কপি এবং ভিজিটিং কার্ড
ছাত্র-ছাত্রীর ক্ষেত্রেঃ স্টুডেন্ট ID কার্ডের কপি ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে।

 

এখন আপনি নিচের লিঙ্কে গিয়ে অনলাইনে ভিসা আবেদন পত্র পুরণ করুন।
ভিসা আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন 

আবেদনপত্র পুরণ করার সময় আপনাকে বেশ কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, নইলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।

  • আবেদনপত্রে পাসপোর্ট নম্বর সঠিকভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে।
  •  মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ সঠিকভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে।
  • আবেদনপত্রে নাম পাসপোর্টের সাথে মিল রেখে টাইপ করতে হবে।
  • আবেদনপত্রে অবশ্যই স্ক্যান করা ছবি থাকতে হবে। আপনি যে ছবি আবেদনের সাথে জমা দিবেন, সেই ছবির ৩৫০ বাই ৩৫০ পিক্সেল সফট কপি আবেদন পত্রে আপলোড করতে হবে।
  • পূর্ববর্তী পাসপোর্ট যদি থাকে তাহলে মূল পাসপোর্ট এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। যদি হারিয়ে যায় সেক্ষেত্রে জিডি কপি সংযুক্ত করতে হবে।
  • পূর্ববর্তী ভিসা ইস্যু করার বিবরণ খালি রাখা যাবে না। যদি পূর্ববর্তী ভিসা না থাকে, তবে NO সিলেক্ট করুন।
  • আপনি যেখানে যাবেন সেই জায়গার একটি হোটেলের ঠিকানা আগে থেকে কপি করে রাখবেন কারণ আবেদন করার সময় কয়েক জায়গায় আপনাকে সেই হোটেলের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার টাইপ করতে হবে। এমনকি ভারতের রেফারেন্সের জায়গাতেও সেই ঠিকানা ব্যবহার করবেন।
  • ভারত ও বাংলাদেশে এর রেফারেন্স খালি রাখা যাবে না ।
  • আবেদন পত্রে বর্তমান ঠিকানা ইউটিলিটি বিলের সাথে হুবহু মিল থাকতে হবে ।
  • পেশার বিবরণ সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে ।
  • জন্মের তারিখ জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম সনদপত্রের সঙ্গে মিল থাকতে হবে
  • আপনি যে বর্ডার দিয়ে বাই রোডে ইন্ডিয়াতে প্রবেশ করতে চান, সেই বর্ডার সঠিকভাবে সিলেক্ট করবেন।
  • ভিসার আবেদন করতে যখন হচ্ছেই, তখন মাল্টিপল ভিসার জন্য আবেদন করবেন এবং ১২ মাসের ভিসার জন্য আবেদন করবেন। (এখন অবশ্য ১২ মাসের আবেদন করলেও ৬ মাসের ভিসা দিচ্ছে।)
  • ভিসা আবেদন ফরম কয়েকটি ধাপে পুরণ করতে হয়। তাই বেশি সময় লাগলে আবার প্রথম থেকে পুরণ করার প্রয়োজন হয়। তাই প্রথম ধাপ পুরণ করার পর আবেদনের উপরে একটি ট্র্যাকিং নাম্বার পাবেন। ঐটা সেভ করে রাখলে কোন কারণে টাইম আউট হয়ে গেলে ঐ ট্র্যাকিং নাম্বার দিয়ে আবার ঐ জায়গা থেকে শুরু করতে পারবেন।
  • ছবি আপলোড করার পর ফাইনাল স্টেজে পুরো আবেদন চেক করে ফাইনাল সাবমিট করবেন কারণ কোথাও ভুল হলে ফাইনাল সাবমিটের আগে সেটা ইডিট করা যায়।
  • ফাইনাল সাবমিট করার পর প্রিন্ট করে ডান পাশে উপরে ছবির ঘরে একটা ছবি আঠা দিয়ে লাগাবেন।
  • এখন ছবি যেখানে লাগিয়েছেন তার নিচে এবং শেষ পাতার নিচে দুই জায়গায় আপনার পাসপোর্টে যেমন সাইন করেছেন সেই একই সাইন করবেন। অন্য সাইন করলে ভিসা বাতিল হতে পারে।
  • আবেদনপত্র পূরণ করার ৮ দিনের মধ্যে অনলাইনে এখানে ক্লিক করে ভিসা ফি প্রদান করতে পারেন অথবা ভিসা সেন্টারের বাইরে অনেক দোকানে ভিসা ফি পে করে, সেখান থেকেও পে করতে পারেন। তারপর আবেদনপত্র অন্য ডকুমেন্টের সাথে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।
  • ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, যশোর, সিলেট, সাতক্ষীরার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ ঢাকা মিশন নির্বাচন করবে।
  • চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ চট্টগ্রাম মিশন নির্বাচন করবে।
  • রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁ, বগুড়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ রাজশাহী মিশন নির্বাচন করবে।
  • সিলেট পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ সিলেট মিশন নির্বাচন করবে।
  • আপনার ভিসা আবেদন জমাদানকারী সেন্টার এবং টাকা জমাদানকারী সেন্টার এর নাম অবশ্যই এক হতে হবে।

 

অতিরিক্ত কিছু টিপসঃ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে সাধারণত সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত প্রবেশ করতে দেয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌছাবেন। সাধারণত ১ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রসেস কমপ্লিট হয়। তারপর আপনি এসএমএস পেলে ৩টা থেকে ৫ টার মধ্যে গিয়ে পাসপোর্ট কালেক্ট করতে পারবেন। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যেদিন জমা দিতে যাবেন সেইদিনই শুনে আসবেন ঐ কেন্দ্র কোন সময় পাসপোর্ট রিটার্ন দেয়।

আশা করি আপনি পর্যাপ্ত ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা অতি দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

 

অবশেষে বলতে চাই, এই পোষ্টটি যদি আপনার কাছে ভাল লাগে এবং উপকারি মনে হয়, তবে আপনার পরিচিতজনদের শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন।                                                                

মন্তব্য করুন