আপনি কি জানেন ব্ল্যাকহোল কি? কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে ব্ল্যাকহোল? মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে অন্যতম রহস্যময় এক বিষয় ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহব্বর। আমাদের সাধারন বিচার বুদ্ধি দিয়ে ব্ল্যাকহোল অনুধাবন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ এমন কোন কিছুর অস্তিত্ব মানুষ কখনোই সরাসরি প্রত্যক্ষ করেনি। মহাজাগতিক স্থান ও সময় এর নিয়ত পরিবর্তনের ফলে বদলে যাচ্ছে সম্পূর্ণ সৃষ্টি জগত আর এই জগতের অন্যতম উপাদান হল ব্ল্যাক হোল।
ব্ল্যাকহোল মহাকাশের এক অদ্ভুত বিস্ময়কর উপাদান। বাংলায় একে বলা হয় কৃষ্ণগহবর বা কৃষ্ণবিবর। ব্ল্যাকহোল মহাকাশের এমন এক অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ বল অত্যন্ত প্রবল। আমরা সবাই জানি মহাবিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সত্তা আলো সেই আলো পর্যন্ত ব্ল্যাকহোলের বল ছিন্ন করতে পারে না এর ফলে ব্ল্যাকহোল থেকে কোন আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছানো সম্ভব না তাই ব্ল্যাকহোল কখনো দেখা সম্ভব না। তবে ব্ল্যাকহোলের নামে যা দেখা যেতে পারে তা হল এর চারদিকের সীমানা। ব্ল্যাকহোলের সীমানাকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন ঘটনা দিগন্ত। কোন বস্তু এই সীমানা অতিক্রম করার সাথে সাথে তার ব্ল্যাকহোলের অতল গহবরে হারিয়ে যায়।ঘটনা দিগন্তের মধ্যবর্তী স্থান থেকে কোন বস্তুর কখনো ফিরে আসতে পারেনা।
বিংশ শতক পর্যন্ত ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারনাই ছিল না। ১৯১৬ সালে জার্মান পদার্থবিদ কার্ল শোয়ার্জশিল্ড আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যবহার করে হিসেব করেন যে কোন ভর ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে যদি তাকে যথেষ্ট সংকুচিত করা যায়। এই তত্বের মাধ্যমেই ব্ল্যাকহোলের ধারণা মানুষের সামনে আসে। দীর্ঘদিন এই আলোচনার সুযোগ তত্ত্বের পর্যায়ে ছিল। ১৯৭১ সালে এই তত্বের বাস্তব উদাহরন আমাদের সামনে হাজির হয় তৎকালীন জ্যোতির্বিদরা কন্সটেলেশন সিগন্যাস বা বক মন্ডল পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রথম ব্ল্যাকহোল আবিষ্কার করেন। মহাবিশ্বে এত বিপুল পরিমাণ ব্ল্যাকহোল ছড়িয়ে আছে যা বিজ্ঞানীদের ধারণারও বাইরে।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাকহোলের ধারণা প্রদান করেছেন স্টেলার এবং সুপারম্যাসিভ ব্লাক হোল এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। যখন অতিবৃহৎ তারকার মৃত্যু ঘটে তখন স্টেলার ব্ল্যাকহোল জন্ম নেয়। এরা সাধারণত আমাদের সূর্যের ১০ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এরকম বহু কৃষ্ণবিবর বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রয়েছে, শুধুমাত্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই দশ লক্ষেরও বেশি স্টেলার ব্ল্যাকহোল রয়েছে। এর পরেই রয়েছে সুপারম্যাসিভ ব্লাক হোল এর নাম থেকেই প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় এরা আকারে অতি বৃহৎ।একটি একটি সুপারম্যাসিভ ব্লাক হোল আমাদের সূর্যের চেয়ে কয়েক বিলিয়ন গুণ বড় হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এদের সম্পর্কে শুধু ধারনাই করতে পারে এদের সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান মানুষের নেই তবে প্রত্যেক ছায়াপথের কেন্দ্রেই অন্তত একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল রয়েছে এমনকি আমাদের ছায়াপথের বাসিন্দা সেই আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রেও সুপারম্যাসিভ ব্লাক হলের অস্তিত্ব আছে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপার্মাসিভ ব্লাক হোলের নাম সাজেটেরিয়াস-এ। ধারণা করা হয় এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ গুণ বেশি এবং এর ব্যাস আমাদের পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের সমান। ব্ল্যাক হোলের সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হল এগুলো সম্পূর্ণ অদৃশ্য। বিজ্ঞানীদের কল্পনা আর শিল্পীদের বিশেষ দক্ষতাই তৈরি করা হয়েছে ব্ল্যাক হোলের কিছু চিত্র। অতিকাই এই মহাজাগতিক বস্তুর চোখে দেখা না গেলেও এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই কারণ ব্ল্যাকহোলের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু থেকে এদের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কৃষ্ণবিবরের প্রতিবেশী মহাজাগতিক বস্তুর উপর তাদের প্রভাব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ করে।
এমন একটি আলামত অ্যাক্রিশন ডিস্ক। অ্যাক্রিশন ডিস্ক হলো বিভিন্ন ধরনের নাক্ষত্রিক ধ্বংসাবশেষ যা ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে এক ধরনের বলয় তৈরি করে। এরা হলো সেই সব গ্যাস এবং মহাজাগতিক বর্জ্য যা অল্পের জন্য ব্ল্যাকহোল গ্রাস করে নিতে পারেনি।এরা ব্ল্যাকহোলের ভেতরেও যায়নি আবার ব্ল্যাকহোলের টান অস্বীকারও করতে পারেনি। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের আর একটি শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো কুয়েসার। কুয়েসারকে আপাত নক্ষত্র বলা হয়। এরা অতি উজ্জ্বল তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তি এদের উজ্জলতা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সমান কয়েক হাজার ছায়াপথের উজ্জ্বলতার চেয়েও অনেক বেশি।
প্রায় ৪০ বছর আগে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও সর্ব প্রথম টেলিস্কোপ আবিষ্কার এর মাধ্যমে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ এ এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তারপর থেকে জ্যোতির্বিদ্যার বহু অগ্রগতি হলেও মহাকাশের অতি সামান্য রহস্যই আমরা উদঘাটন করতে পেরেছি। অসীম এই অজানাকে জানার যাত্রায় যে কয়েকটি যন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে হাবল টেলিস্কোপ তার মধ্যে অন্যতম। যার মাধ্যমেই বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহ, তারা, চাঁদ, সূর্য ছায়াপথ ব্ল্যাক হোল আরও বিভিন্ন কিছুর অনুসন্ধান করে এবং তথ্য সংগ্রহ করে।