আজ একটু সকালেই নিধি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল এবং মাকে বলল তার আসতে দেরি হবে। আজ তার মনটা অন্যদিনের তুলনায় অনেক ভালো। আজ সে ইচ্ছে করেই লাল জামাটা পড়ে ছিল। কিছুদিন হল তার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আগের মতো সে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় না,ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে না বা শপিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। দু সপ্তাহ আগেও নিধি এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। দিনটা ছিল রবিবার, ক্লাস থেকে বের হবে, এমন সময় সে দেখে তার পাশে রবীন্দ্রনাথের কবিতার বই। বইটা নিয়ে বন্ধুদের কে জিজ্ঞেস করল তাদের কিনা, কেউ বলেনি আমরা। নিধি বই নিয়ে চলে আসে। রাতে বই টা দেখতে গিয়ে তার মধ্যে একটা চিরকুট পেল।কৌতুহলের বশে চিরকুটটা সে পড়তে লাগলো এটাকে প্রেম পত্র বলাই চলে। পরের দিন সে আর একটা বই পাই তার মধ্যে ও আবার চিরকুট। এমন করে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল। ২০২১ সালে কেউ আগের দিনের মতো চিরকুটে নিজের মনের কথা জানাবে এটা ভেবেই নিধি অবাক হয়ে ওঠে। আজকের দিনে প্রেমটা এমন যে, কেউ চাইলে ফোন বা সামনে থেকে নিবেদন করে। সুতরাং আড়ালে থেকে কেন সে এই চিরকুট দেয়, তাই মনে মনে ভাবে আর হাসতে থাকে।
মম,অমি,তুবা এদেরকে নিধি আর সময় দিতে পারে না। এখন যেন তার দুটো কাজ, চিরকুট এর মানুষটির কথা ভাবতে থাকা আর চিরকুট পড়া। আজ চিরকুটটা আবদার আর ইচ্ছেতে পরিপূর্ণ ছিল। হঠাৎ করে নিধির মন আনন্দে পাখির মতো ডানা মেলতে চাচ্ছিল। নিধি মা-বাবার একমাত্র সন্তান, তাই মা-বাবা তার কোন আবদারই অপূর্ণ রাখেনি। তাইতো শখ করে বাবা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাওয়ার জন্য নিধিকে কালো রংয়ের একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিল. সেই সাথে আবার একজন ড্রাইভারও ছিল। নিত্য দিনের মতো আজও চিরকুট পড়ে আর এটাই ভাবে, এতদিন পর সে চিরকুটের মানুষটির সঙ্গে দেখা করতে পারবে। তাতে লেখা ছিল কাল কি তুমি আমার জন্য নীল শাড়ি পরে আসবে? আমার সামনে আমার আকাশে পাখির মতো ডানা মেলে উড়বে? আর আমি বোকার মতো তোমার দিকে চেয়ে থাকবো। তোমার রুপে আমার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করবে। তোমাকে কাছে পাওয়ার আকুলতা আমাকে ঢেউয়ের মতো করে আছড়ে ফেলবে। আমি আমার সেই নিধু সখী কে দেখতে চাই।
চিরকুটের মানুষটিকে নিধি কখনোই দেখেনি কিন্তু সেই মানুষটি তাকে ভালো করে চেনে। হঠাৎ করে নিধির মনে এই মানুষটির জন্য কৌতূহল এবং ভালোবাসা দুটোই জন্ম নেয়। নিধি ও তার সাথে দেখা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। চিরকুটের শেষে লেখা ছিল তোমার সাথে মিলিয়ে আমিও নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়ে যাবো। রাত জেগে নিধির মনে নানা রকম প্রশ্ন আসে চিরকুটের মানুষটিকে সে বলবে এত মেয়ে থাকতে নিধিকে কেন চিরকুটটা দিল আর কেনই বা তাকে পছন্দ করলো? বাবার মত কি তার ছোট ছোট সব আবদার গুলো চিরকুটের মানুষটা মেনে নেবে? ভাবতে ভাবতে সে একসময় ঘুমিয়ে পরে। এইদিকে বেশি রাত জাগার কারণে সকালে সময়মত ঘুম ভাঙ্গেনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিধি তারাতাড়ি করে শাড়ি পরে বের হলো। নিচে এসে শুনতে পেল ড্রাইভার নাকি অসুস্থ আজ আসতে পারবে না। তাই সে নিজেই তাড়াহুড়ো করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। নিধির গাড়ি জ্যামে পরে অনেক সময় চলে গেল। তাই নিধি তারাতাড়ি করে গাড়ি চালিয়ে গেল। মোর ঘোরাতেই তার মনে হয় নীল রঙের আভা তার গাড়ি ছুঁয়ে গেল। সে দ্রুত ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হলো।
কথা মতো যেখানে দেখা হবার কথা ছিল। অনেক সময় পাড় হয়ে গেল কিন্তু চিরকুটের মানুষ আসলো না। নিধি অনেক সময় বসে রইলো। অবশেষে বাড়িতে ফিরে গেল। পরদিন ক্যাম্পাসে এসে বই আর চিরকুট খুঁজতে লাগলো। এর মধ্যে জানতে পারে বই পাগল আবির মারা গেছে। সবার সাথে নিধিও আবিরের বাড়ি গেল। সেই সময় হঠাৎ নিধির চোখে পড়ল আবিরের মা নীল রঙের পাঞ্জাবি জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করছে। এটি চোখে পরতেই নিধি তারাতাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আবির কিভাবে মারা গেছে? মা বললেন তার ছেলে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। একটি কার তার ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলেছে। রুমে যেতেই দেখতে পেল রবীন্দ্রনাথের সব ধরনের বই। তার মধ্যে নিধি কবিতার বই এর মধ্যে চিরকুট খুঁজতে থাকে। এমন সময় একটা চিরকুট পেল যেখানে নিধির নামে চিরকুটটি লেখা ছিল। তারপর আর বুঝতে বাকি থাকল না চিরকুটগুলো কার ছিল। বাড়ি ফিরে নিধি ভাবে নিজের ভালবাসাকে নিজেই শেষ করেছে। এটা কোন ভাবেই মানতে পারছিল না। এক সময় নিধি নিজেই নিজেকে মানতে পারছিল না। যার ফলে সে আর সুস্থ থাকলে পারলো না। তারপর, তারপর এখন তার পরিচয় ১৩৩৬ রুমের ২২নং রুগী, ঠিকানা পাবনা মেন্টাল হাসপাতাল।😥😥এভাবে কতো ভালবাসা হারিয়ে যায় এবং না পাওয়ায় থেকে যায় হাজারো হৃদয়ের ভালবাসা।